আজ ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাশরুম পরিচিতি ও চাষ পদ্ধতি


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক

মাশরুম এক প্রকার ছত্রাক। এটা একটি সুস্বাদু খাবারও। বর্তমানে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও মাশরুম খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিকভাবেও মাসরুম চাস হচ্ছে। পৃথিবীতে প্রায় ৩ লাখ প্রজাতির মাশরুম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার প্রজাতি খাওয়ার অযোগ্য। আনুমানিক ১০ হাজার প্রজাতির মাশরুমের ওপর গবেষণা চলছে। বাংলাদেশে ঋষি মাশরুম, গুটি বা বাটন মাশরুম, মিল্ক হোয়াইট মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম, স্ট্র মাশরুমের চাষ করা হচ্ছে। অধিক পরিমাণ লাভজনক হওয়ায় অনেক লোক মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। মাশরুম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। ক্ষুদ্র বা ব্যাপক পরিসরে মাশরুম চাষ করা যায়। স্পূন থেকে মাশরুম চাষ করা হয়। এই স্পনেগুলো ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়। সব ধরনের ছত্রকই মাশরুম না। শুধুমাত্র খাওয়ার উপযোগী ছত্রাকই মাশরুম। অর্থাৎ সকল মাশরুমই ছত্রাক কিন্তু সকল ছত্রাক মাশরুম নয়। পৃথিবীতে ৩ লক্ষ্য প্রজাতির ছত্রাক থাকলেও এ যাবত কাল পর্যন্ত মাত্র ২০০ প্রজাতির খাওয়ার উপযোগী ছত্রাক তথা মাশরুমের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩০ টি প্রজাতি বানিজ্যিক ভিত্তিতে এবং ১০ টি ইন্ডাট্রিয়াল স্কেলে চাষ করা সম্ভব। বলে রাখা ভালো প্রতিটি প্রজাতিরই আবার অসংখ্য চাষ উপযোগী স্ট্রেইন (বর্ন) রয়েছে। বর্তমানে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারন কেন্দ্রে ১৫৭ টি চাষ উপযোগী মাশরুমের স্ট্রেইন রয়েছে।

এছাড়াও ১৭০ টি দেশিয় মাশরুমের স্ট্রেইন সংগ্রহ ও এর চাষ গবেষনার কাজ চলছে। মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় নতুন ফসল দেশব্যাপী এর সম্প্রসারনের কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিভুক্ত “জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র” এবং এর ১৬ উপকেন্দ্র। মাশরুমের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় মাশরুমের জাত সমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জাত সমুহের খাপ খাওয়ানো এবং নতুন প্রজাতির মাশরুমের চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এর সম্প্রসারনের কাজ করে যাচ্ছে। মাশরুম সংক্রান্ত বই পুস্তক খুবই কম বিধায় এ সংক্রান্ত কোন লেখা প্রকাশ করার পুর্বে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করলে লেখাটিকে আরো তথ্যবহুল এবং বাস্তব ভিত্তিক করা সম্ভব। বলে রাখা ভালো যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাষ পদ্ধতি থেকে আমাদের দেশের চাষ পদ্ধতি অনেকাংশেই আলাদা।

চাষের উপযোগী স্থান:

মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই এর জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। মাশরুম চাষ করার জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় ছন বা বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করতে হয়। মাটির দেওয়াল দিয়েও ঘর তৈরি করা যায়। আবার বাঁশের বেড়াও দেওয়া যায়। ঘরের ভেতর যাতে আলো ঢুকতে না পারে সেজন্য বাঁশের বেড়ায় মাটি লেপে দিতে হয়।

অয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি :

অয়েস্টার মাশরুম বীজ বা স্পনে ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করে মাশরুম চাষ শুরু করা যাবে। ধাপে ধাপে মাশরুম চাষ করতে হয়।

১. মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে মাশরুমের বীজ বা স্পন প্যাকেট সংগ্রহ করতে হবে। বীজ বা স্পনে দুই পাশে কিছুটা গোল করে কেটে চেঁছে নিতে হবে।

২. মাশরুমের প্যাকেট পানিতে ৩০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পরে পানি থেকে মাশরুমের প্যাকেট উঠিয়ে নিতে হবে।

৩. অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য মাশরুমের প্যাকেট ৫ থেকে ১০ মিনিট উপুড় করে রাখতে হবে। পানি ঝরে গেলে ঘরের নির্ধারিত জায়গায় রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন এর উপর তিন থেকে চারবার করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।

৪. সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন পর কাটা জায়গা থেকে অঙ্কুর গজায়। অঙ্কুর গজানোর পর মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।

৫. খাওয়ার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হতে ৫ বা ৬ দিন সময় লাগে। খাবার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হলে তা গোড়া থেকে তুলে নিতে হবে।

৬. বীজের যে জায়গা কাটা হয়েছিল তা ব্লেড দিয়ে একটু চেঁছে দিতে হবে। এই বীজ থেকে আবার মাশরুম গজাবে।

৭. একটা আধা কেজি ওজনের বীজ বা স্পন প্যাকেট থেকে ৩-৪ বার মাশরুম পাওয়া যায়। এতে মোট ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে।

সাবধানতা অবলম্বন:

১. বীজ বা স্পনে কোনভাবেই সূর্যের আলো পড়তে দেওয়া যাবে না। সবসময় ঘরটি ঠান্ডা রাখতে হবে। খুব বেশি গরম পড়লে ঘরের চারদিকে বস্তা ঝুলিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

২. মাশরুম ঘর ও ঘরের বাইরের চারদিক সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন জায়গায় মাশরুম ফ্লাই নামের পোকা মাশরুমের ক্ষতি করে।

৩. কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।

আয় ও লাভের হিসাবঃ

অয়েস্টার মাশরুমের পাপড়ি বেশি ছড়ানোর আগেই তুলে গোড়া থেকে সামান্য কেটে ফেলতে হবে। পলি প্রোপাইলিনের প্যাকেটে কয়েকটা ছিদ্র করে এর মধ্যে মাশরুমগুলো ভার মুখ বন্ধ করে এই প্যাকেট বাজারজাত করতে হবে। প্রতিটি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়। সুতরাং ২০০টি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ৪০ কেজি মাশরুম পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মাশরুমের দাম প্রায় ১২০ টাকা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর